নিজস্ব প্রতিনিধি শ্যামলী ত্রিপুরা,অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ভারতের বিরোধী অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক। আর পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতার কথা তো নতুন করে কিছু বলার নেই। অথচ, ভূমিকম্পের পর প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্যোগে ‘অপারেশন দোস্ত’ পরিচালনার পর, সেই তুরস্কেই এখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীরই জয়জয়কার। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিয়োতে যেমন তুরস্কবাসীকে ভারতের নামে ধন্য ধন্য করতে দেখা গিয়েছে। এনডিআরএফ এবং অন্যান্য ভারতীয় উদ্ধারকারী দলগুলি সেই দেশ থেকে ফিরে এসে জানিয়েছেন, কীভাবে বিপর্যয়ের সময় পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারত ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেছে তুরস্কের বাসিন্দারা। আর তুরস্কে নরেন্দ্র মোদীর এই জয়জয়কার দেখে, তাঁর থেকে পাক প্রধানমন্ত্রীকে উদাহরণ গ্রহণ করতে বলছে তীব্র আর্থিক সঙ্কটে ভোগা আম পাকিস্তানিরা। বদলে গেল সব কূটনৈতিক সমীকরণ। কীভাবে হল এই বদল? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পিছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিদেশ নীতি, যার মূলে রয়েছে চিরন্তন ভারতীয় চিন্তাধারা – ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’।চলতি মাসের শুরুতেই শক্তিশালী জোড়া ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক-সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত কয়েক সপ্তাহের খবরে ধ্বংসযজ্ঞের ছবিটা স্পষ্ট হয়েছে। মৃত্যুর মিছিল ৫০,০০০ ছাড়িয়েছে। এই অবস্থায় সবার আগে যে দেশ আর্তদের উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিল, সেই দেশের নাম ছিল ভারত। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুরস্ক যে নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, বিপর্যয়ের সময় সেই ব্যবধান পিছনে ফেলেছিল ভারত। রাতারাতি ‘মিশন দোস্ত’ চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি নিজেই এই অভিযান মনিটর করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক এবং বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরী বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি। এনডিআরএফ এবং সেনার যৌথ দলকে অবিলম্বে তুরস্ক যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ১দিনে তৈরি করা হয়েছিল সকলের পাসপোর্ট। ৪০০০ জওয়ানের কুইক রেসপন্স টিম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রওনা দিয়েছিল তুরস্কের উদ্দেশ্যে। ৬টি গ্লোবমাস্টার বিমানে করে পাঠানো হয়েছিল ওষুধপত্র ও ত্রাণ।
এই ভাবেই তুরস্কের মিত্রশক্তি হিসেবে পরিচিত দেশগুলিও যখন ইস্তানবুলের পাশে দাঁড়াতে পারেনি, সেই সময় ভারতের উদ্ধারকারী দল যেন দেবদূত হয়ে উঠেছিল তুরস্কের বাসিন্দাদের জন্য। দেশে ফিরে আসার পর উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পুরো পৃথিবীই আমাদের পরিবার। অর্থাৎ, জীবমাত্র সকলকে নিজের মনে করে সেবা করতে হয়। তুরস্ক হোক বা সিরিয়া, সম্পূর্ণ উদ্ধারকরী দল এক প্রকারে এই ভারতীয় দর্শনকেই তুলে ধরেছে।” আসলে ধর্ম, দেশ বা জাতি নয়, মানবতাই নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ নীতির মূল মন্ত্র। আর এইভাবেই তুরস্ক, পাকিস্তানের মতো তথাকথিত বিরোধী দেশও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।বস্তুত, এই একটি ক্ষেত্রেই নয়, অতীতেও বিভিন্ন বিপর্যয়ের সময় ভারত বিরোধী অবস্থান নেওয়া দেশগুলির পাশে দাঁড়াতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি মোদী সরকার। ধারাবাহিকভাবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে মিথ্যা আখ্যান তৈরি করে, বিশ্বের মুসলিম দেশগুলিকে ভারত বিরোধী মঞ্চে টানার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। বেশ কিছু দেশ পাকিস্তানের সেই মিথ্যা আখ্যানে বিভ্রান্তও হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, মোদী সরকারের আমলে বেশিরভাগ উদ্ধার অভিযান হয়েছে মুসলিম দেশগুলিতেই। সঙ্কটের সময়, এই সমস্ত ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র মানবিক বিদেশ নীতিকে সামনে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তুরস্ক-সিরিয়ায় উদ্ধার অভিযানের আগে, আফগানিস্তান, ইয়েমেনে উদ্ধার অভিযান, কোভিডের সময় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ওমান থেকে উদ্ধার অভিযান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ইউক্রেনে উদ্ধার অভিযান – একের পর এক ক্ষেত্রে মোদীর এই মানবিক বিদেশনীতির পরিচয় পাওয়া গিয়েছে।
তুরস্কে ভারতের অপারেশন দোস্তের পর সারা বিশ্বে ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে গোটা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গীই পাল্টে গিয়েছে। সকলেই এখন জানে যে, বিশ্বের যেখানেই কোনও বিপর্যয় ঘটুন না কেন, সঙ্কট মোটনে এগিয়ে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর তাঁর দেবদূতরা।